Wednesday, December 26, 2012

শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা


ভাস্কর চক্রবর্তী

শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা,
আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব –
প্রতি সন্ধ্যায় কে যেন ইয়ার্কি করে ব্যাঙের রক্ত
ঢুকিয়ে দেয় আমার শরীরে –
আমি চুপ করে বসে থাকি –
অন্ধকারে নীল ফানুস উড়িয়ে দেয় কারা,
সারারাত বাজি পোড়ায়
হৈ-হল্লা – তারপর হঠাৎ
সব মোমবাতি ভোজবাজির মতো নিবে যায় একসঙ্গে –
উত্সবের দিন হাওয়ার মতো অন্যদিকে ছুটে যায়,
বাঁশির শব্দ আর কানে আসে না –
তখন জল দেখলেই লাফ দিতে ইচ্ছে করে আমার
মনে হয় – জলের ভেতর – শরীর ডুবিয়ে
মুখ উঁচু করে নিশ্বাস নিই সারাক্ষণ –
ভালো লাগে না সুপর্ণা,
আমি মানুষের মতো না, আলো না, স্বপ্ন না –
পায়ের পাতা আমার চওড়া হয়ে আসছে ক্রমশ –
ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ শুনলেই
বুক কাঁপে, তড়বড়ে নিশ্বাস ফেলি,
ঘড়ির কাঁটা আঙ্গুল দিয়ে এগিয়ে দিই প্রতিদিন –
আমার ভালো লাগে না – শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা,
আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব

একবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই মেঘ
ঝুঁকে থাকতে দেখেছিলাম জানলার কাছে –
চারিদিকে অন্ধকার
নিজের হাতের নখও স্পষ্ট দেখা যচ্ছিল না সেদিন –
সেইদিন তোমার কথা মনে পড়তেই
আমি কেঁদে ফেলেছিলাম –
চুলে দেশলাই জ্বালিয়ে চুল পোড়ার গন্ধে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
আবার -এখন আমি মানুষের মতো না –
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
হঠাৎ এখন লাফ দিতে ইচ্ছে করে আমার
– ভালোবাসার কাছে, দীর্ঘ তিনমাস
আর মাথা নিচু করে বসে থাকতে ভালো লাগে না –
আমি মানুষের পায়ের শব্দ শুনলেই
তড়বড়ে নিশ্বাস ফেলি এখন – যে-দিক দিয়ে আসি, সে-দিকেই দৌড় দিই
কেন এই দৌড়ে যাওয়া?
আমার ভালো লাগে না
শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা,
আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব ।।

নারী ও শিল্প


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ঘুমন্ত নারীকে জাগাবার আগে আমি তাকে দেখি
উদাসীন গ্রীবার ভঙ্গি, শ্লোকের মতন ভুরু
ঠোঁটে স্বপ্ন বিংবা অসমাপ্ত কথা
এ যেন এক নারীর মধ্যে বহু নারী, বিংবা
দর্পণের ঘরে বস
চিবুকের ওপরে এসে পড়েছে চুলের কালো ফিতে
সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে না, কেননা আবহমান কাল
থেকে বেণীবন্ধনের বহু উপমা কয়েছে

আঁচল ঈষৎ সরে গেছে বুক থেকে-এর নাম বিস্রস্ত,
এ রকম হয়
পেটের মসৃণ ত্বক, ক্ষীণ চাঁদ নাভি, সায়ার দড়ির গিট
উরুতে শাড়ীর ভাঁজ, রেখার বিচিত্র কোলাহল
পদতল-আল্পনার লক্ষ্মীর ছাপের মতো
এই নারী
নারী ও ঘুমন্ত নারী এক নয়
এই নির্বাক চিত্রটি হতে পারে শিল্প, যদি আমি
ব্যবধান টিক রেখে দৃষ্টিকে সন্ন্যাসী করি
হাতে তুলে খুঁজে আনি মন্ত্রের অক্ষর
তখন নারীকে দেখা নয়, নিজেকে দেখাই
বড় হয়ে ওঠে বলে
নিছক ভদ্রতাবশে নিভিয়ে দিই আলো
তারপর শুরু হয় শিল্পকে ভাঙার এক বিপুল উৎসব
আমি তার ওষ্ঠ ও উরুতে মুখ গুঁজে
জানাই সেই খবর
কালস্রোত সাঁতরে যা কোথাও যায় না।